আমাদের বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে ঋণের কোনো চাহিদা নেই। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে, ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক যাদের সঙ্গে ব্যবসা করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, ব্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা,
আমি বলব যে এতে অর্থনৈতিক খাতের একটি বিশেষ অবদান আছে। ব্যাংগুলো আর্থিক খাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আরো অনেক ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখছে।
এখন যে অবস্থা করোনার কারণে ব্যাংকিং খাতে অনেক দিক থেকে প্রভাব পড়বে।
ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হবে। কাজের গতি কমে যাবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডর গতি কমে যাবে।
এতে করে ব্যাংকের আয় কমে যাবে। ফলে নয় শতাংশ তো দুরের কথা পাঁচ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়বে। এমনকি এর বাইরে থাকবে না বাংলাদেশও।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বড় ধাক্কা দেবে করোনাভাইরাস,
এতে কোন সন্দেহ নেই।
আর করোনা সংক্রমণের পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে ব্যাংকিং খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
মনেকরা হচ্ছে এতে করে নতুন করে আবার ব্যাংকের কাজ শুরু করতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকে খুব কমই লোক ক্যাশ ইন করতেছেন, প্রায় বেশিরভাগ লোকজনই ক্যাশ আউট করছেন। জনগন বর্তমানে ক্যাশ ইন করার সামর্থ হারাচ্ছে, এতে ব্যাংকার দেরকে চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হবে।
অনেক বিশেষজ্ঞদের ও ব্যাংকারদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং খেলাপি ঋণের কারণে এই খাত এমনিতেই বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে।
এ অবস্থায় করোনার সংক্রমণ ব্যাংকিং খাতের বিপর্যয় আরও বাড়াবে।
অন্যদিকে আবার করোনাভইরাসের কারণে-
ব্যবসায়ায়িক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আমদানি-রফতানি হচ্ছে না। এটাও ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। আবার এখন রেমিটেন্স ও আসছে না এটাও অনেক প্রভাব ফেলবে। মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আসবে না। আমানত রাখার পরিমাণ আরও কমে যাবে। খেলাপি ঋণ জুন পর্যন্ত মেয়াদ দেওয়ায় ব্যাংকের আয় কমে যাবে। নতুন করে আরও ঋণ খেলাপি হবে।
করোনার কারণে আগামী জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ আদায় এবং নিয়মিত ঋণের কিস্তি আদায়েও নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণ ও নিয়মিত ঋণের কিস্তি আদায় করতেন না পারলে ব্যাংকগুলোতে খুবই সংকট সৃষ্টি হবে।
এ ছাড়াও ব্যাংকের ডিপোজিট অনেক দিন আগে থেকেই কমছে। বর্তমান অবস্থায় ব্যাংকের ডিপোজিট আরও কমে যাবে।
ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতে আরও বিপর্যয় নেমে আসবে। আর এ বিপর্যয় থেকে উত্তরণকেই নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই মোকাবেলা করতে হবে।
ব্যাংকের বর্তমান উচ্চ সুদহার দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বৃহৎ শিল্পগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসা করার ব্যয় বাড়ছে এবং শিল্পগুলো তাদের প্রতিযোগিতা হারাচ্ছে।
ব্যাংকিং সেক্টর করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে থেকেই বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল। নতুন করে এই সংকট তৈরি হওয়ায় অবস্থা আরও খারাপ হবে। করোনার কারণে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বন্ধ থাকায় উদ্যেক্তারা ঋণ নিয়ে কী করবেন? আর ঋণ না নিলে ব্যাংকের আয় কমে যাবে।
সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে সমস্যা আরও বাড়বে।
করোনার কারণে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। ফলে নতুন করে কোনো ঋণ আদায়ও হবে না। এতে করে ব্যাংকের আয় কমে যাবে। এ ছাড়া এমনিতেই ব্যাংকের ডিপোজিট অনেক দিন ধরে কমছে, এটা আরো কমে যাবে। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত এক ধরনের বিশাল সংকটে পড়বে।
এখন আমাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন: CRR ও পলিসি রেট কমিয়েছে। তবে এতে করে যে সমস্যার বড় মাত্রার সমাধান হবে, তাতে সকল পেশার মানুষেরা তা করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না, তাই এগুলা প্রত্যাশা করাও মুশকিল। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যাংকগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং পলিসি আরও গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে করে সব সেক্টরেই কম বেশি সুযোগ পায়।
এই মহামারির কারনে দেশের অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে ব্যাংকিংখাতে।
আবার ব্যাংকের বিপর্যয় প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সব সেক্টর বন্ধ রয়েছে। আর বিভিন্ন সেক্টর বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংকিং খাতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
এর সাথে সাথে অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব পরবে তা বুঝাই যাচ্ছে।
আবার দেখা যায় করোনায় চীন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে জন্য আমেরিকা ইউরোপও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর একই কারণে আমাদের দেশের তৈরি পোশাক খাতও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে যা অভাবনীয় বিষয়।
বর্তমানে ব্যাংকের সঙ্গে যারা ব্যবসা করেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত, বিশেষ করে কুটির শিল্প, মাঝারি শিল্প, বড় বড় কলকারাখানা, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি, করপোরেট, ক্রেডিট কার্ড যাই বলি না কেন সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এর প্রভাব ব্যাংক খাতে পড়বেই। এ থেকে নিস্তার পাওয়া কিংবা বাঁচার কোনো উপায় নেই। ফলে করোন পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং খাতে একটা বড় ধাক্কা আসবেই এটা অবধারিত। এটা থেকে আমরা কেউই রেহাই পাব না, এটা আমাদের বড় রকমের একটা চ্যালেঞ্জ এর মুখে দাড়করিয়েবে।
এখন এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আগামী জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ না বাড়ানো এবং খেলাপি ঋণের প্রতিবেদন একই রকম রাখতে হবে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর জন্য অনেক কিছু রিলাক্স করেছে। তার মধ্যে রয়েছে CRR রিপোর্টসহ বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা। সেগুলোকে অব্যাহত রাখতেই হবে।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দ্রুত বাড়াতে হলে সব রকম অনিয়ম ও নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে শৈথিল্য বর্জন করতে হবে। আমাদের এখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। পুঁজিটা কিছু লোকের হাতে চলে যাচ্ছে। এটা তো ভালো লক্ষণ নয়।
আমাদের স্বাধীনতা লাভের যে স্বপ্ন ও পরিকল্পনা ছিল, সেখানে তো এই চাওয়া ছিল যে আমরা একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন করব।
কিছু ক্ষেত্রে আমরা বৈষম্য তৈরি করে ফেলেছি; যা খুবই লজ্জাস্কর ব্যাপার, অর্থনৈতিকভাবে সমাজের সবাই সমপর্যায়ের হয়ে যাবে এটাইতো সমাজ!!
মোটামুটিভাবে উন্নয়নের সুফলটা যেন সবাই পাইতো? সেটা পেলে বৈষম্য অনেকটা কমে যেত। সেটা পাচ্ছে না। আমি মনে করি, ব্যাংকিং সেক্টরে এ জিনিসটা দিন দিন কঠিন ও মধ্যবিত্তদের হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে।
এভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্য রেখে সেই স্বপ্ন কি বাস্তবায়ন করা সম্ভব?
লিখেছেন :
নাঈম ইবনে জহির https://www.facebook.com/NaeemibnZohir |
আসলে এখন দেশের ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে নিয়ে লিখতে গেলে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ পৃষ্ঠার মত লেগে যাবে তাহলে কমবেশি সব কিছুই এর আওতায় চলে আসবে।
ReplyDeleteআমি এই লিখার মাধ্যমে সামান্য কিছু তুলে ধরেছি সবার পক্ষথেকে।