Skip to main content

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিকভাবে আমের ভূমিকা

আম আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধির এক বিরাট সুযোগ হতে পারে।
একটি উৎকৃষ্ট সুস্বাদু ফল হিসেবে আমের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। সারা দেশে আম উৎপন্ন হয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার একর জমিতে। সুতরাং এত বিপুল পরিমাণ জমিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনশক্তি সম্পৃক্ত থাকে। বাগান চাষ ও পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক ছাড়াও শুধু ফলনের মৌসুমেই অর্থাৎ বছরের প্রায় ৪/৫ মাস প্রচুর লোক সারা দেশে আম সংক্রান্ত কর্মকাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে।

 নিম্নোক্তভাবে এক্ষেত্রে জনশক্তির কর্মসংস্থান হতে পারেঃ

১. আম চাষ ও পরিচর্যার মাধ্যমে
২. সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে
৩. আম ও আমজাত দ্রব্যাদি পরিবহনের মাধ্যমে
৪. আম ও আমজাত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের মাধ্যমে
৫. আম শিল্প


১) আম চাষ ও পরিচর্যার মাধ্যমেঃ

ভালো ফলনের জন্য আম গাছে পরিকল্পনা- মাফিক পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে পূর্ণতা অর্থাৎ আম গাছের সঠিক পরিচর্যা ঠিকমতো না হলে ফলনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রতি বছর কমপক্ষে ৪/৫ মাস আম বাগান পরিচর্যার জন্য প্রতি তিন একর আয়তন বিশিষ্ট আম বাগানে ৫ জন শ্রমিক কর্মরত থাকেন। সেই হিসাবে বর্তমানে দেশে ১,২০,০০০ একর জমিতে ৪/৫ মাসের জন্য ১.৬ লাখ থেকে ২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়।

২) সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমেঃ

আম শিল্পে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বিপুল লোক কর্মরত আছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আম বাগানগুলোতে প্রতি দশ একর জমিতে আমের পূর্ণতা প্রাপ্তির পর অর্থাৎ পাকার সময় গড়ে ৬/৭ জন লোক একমাস শ্রম দিয়ে থাকেন। এই হিসাবে প্রতিবছর ৭২-৮৪ হাজার লোকের এক মাসের কর্মসংস্থান হয়।

৩) আম ও আমজাত দ্রব্যাদি পরিবহনের মাধ্যমেঃ

সত্যিকার অর্থে, যে কোনো কাঁচামালের উপযুক্ত দাম এবং উপযোগ পেতে হলে পরিবহনের বিষয়টি সর্বাগ্রে গুরুত্বের দাবি রাখে। আম ফলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটে না। সুতরাং কিছুসংখ্যক লোককে পরিবহনের কাজে সবসময়ই ব্যস্ত থাকতে হয়। আম উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে সারা দেশে তা বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবহন করতে হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমের মৌসুমে (জুন-জুলাই) দুই মাস প্রতিদিন শত শত ট্রাকে হাজার হাজার টন আম রপ্তানি করা হয়ে থাকে।

৪)  আম ও আমজাত পণ্য বাজারজাতকরণের মাধ্যমেঃ

মৌসুমি ফল হিসেবে আমাদের দেশে যে পরিমাণ আম উৎপাদিত হয়, তা বাজারজাতকরণে যে পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান হয় সেটা নেহায়েত কম নয়। তবে বছরের সীমিত সময় দুই থেকে আড়াই মাস আমের বিপণন প্রক্রিয়া চলে বলে এতে খুব বেশি সংখ্যক জনশক্তি কমংসংস্থানের সুযোগ থাকে না।

৫) আম শিল্পঃ

আম কৃষি পণ্য হলেও একে শিল্প পণ্যে রূপান্তরের মাধ্যমে তথা আম শিল্প গড়ে তোলার জন্য যেসব উপকরণের দরকার, তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো সমস্যা নয়, বরং সমস্যা হলো উদ্যোগের।

 আমকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা আমরা যখন ভাবছি, তখন ভারত, পাকিস্তান এমনকি সৌদি আরবও আমজাত পণ্যের অগ্রগতি ঘটিয়েছে।

শিল্প পণ্য হিসেবে আম দিয়ে নিম্নোক্ত খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা সম্ভব,

১. আমের রস।
২. আমের জেলি।
৩. আমের টফি।
৪. আমস্বত্ত্ব।
৫. আমের আচার।
৬. আমের জ্যাম।
৭. আমের পাউডার।



বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমের অবদানঃ

অর্থনৈতিক দিক থেকে আমের অবদান কোনো অংশে কম নয়, আন্তর্জাতিক মানের এই ফলটি শুধু পুষ্টি ও স্বাদের জন্যই বিখ্যাত নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে।

১. রপ্তানি পণ্য হিসেবে আম বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

২. আমকে প্রক্রিয়াজাত করে শিল্প পণ্যে রূপান্তরের মাধ্যমে বড় ধরনের বাজার সৃষ্টি করা যায়। দেশে-বিদেশে এসব পণ্যের চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারজাত ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে।

৩. আম গাছের কাঠ বড় ধরনের অর্থকরী সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। জ্বালানির ওপর উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি লোক নির্ভরশীল, বর্তমানে আম কাঠের জ্বালানি বিপুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সাথে সাথে দেশের জনগোষ্ঠীর আসবাবপত্রের চাহিদা পূরণে আম কাঠ বিরাট ভূমিকা রাখছে।

৪. আম অধিকাংশ ফলের চেয়ে অধিক মূল্যবান। প্রতিষ্ঠিত আম বাগান এক ধরনের স্থাবর  সম্পত্তির মতো। এ সম্পত্তি থেকে বছরে নিয়মিত আয় হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এক একর আম গাছ থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ১ লাখ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

এই শিল্পে নানাবিধ সমস্যা ও সম্ভাবনাকে গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।


লেখকঃ

জাকারিয়া ইমন
https://www.facebook.com/Zackemon1



Comments

Popular posts from this blog

পর্যটন শিল্পে করোনা ভাইরাসের প্রভাব || Econometry

পর্যটন হল এক ধরনের বিনোদন, অবসর অথবা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থান কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করাকে বুঝায়।  ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটন শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশে পরিচিত-অপরিচিত অনেক পর্যটন-আকর্ষণীয় স্থান আছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন।  এর মধ্যে প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, অরণ্য ইত্যাদি অন্যতম। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত ।     এছাড়াও অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে,  চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকত, প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা, চাঁদপুর মিনি কক্সবাজার, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, সোমপুর বৌদ্ধবিহার, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর,  মহাস্থানগড় এবং সিলেটের জাফলং উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি। ধারণা করা হয়েছিল ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ২০...

করোনায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প: সম্ভাবনা ও ঝুঁকি | Econometry

বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনা। করোনার কালো থাবায় ঝুঁকিতে আছে বিশ্ব অর্থনীতি। এক্ষেত্রে কি হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা খাত পোশাক শিল্পের? বর্তমান প্রেক্ষিতে এর সম্ভাবনা  ও ঝুঁকি নিয়েই আলোচনা করছি। ইতোমধ্যেই সারাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০০০০ ছাড়িয়ে, সাথে চলছে লকডাউন। যার ফলে বন্ধ হয়ে আছে এ দেশের পোশাক কারখানাগুলোও। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প পোশাক শিল্প। স্থবির হয়ে থাকা পোশাক শিল্প যে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মত উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় বাঁধা সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ যে লকডাউন চলবে নাকি অর্থনীতি সচল হবে। এক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি পোশাক শিল্পকে পুনরায় চালু করার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে। এ বৈশ্বিক মহামারীর মাঝেও অর্থনীতিকে কিভাবে সচল রাখতে পারে পোশাক শিল্প তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনায় আসছি। প্রথমেই আসি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে       সংক্রামক রোগ হওয়ায় করোনার ঝুঁকি অনেক বেশি কিন্তু এ ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যক্তিগ...

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনির্ভর অর্থনীতি

তৃতীয় বার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮৫-৯০) বলা হয়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মাথাপিছু জমির পরিমান সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-২০১৫) বলা হয় বছরে প্রায় ১শতাংশ হারে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে এবং এর সাথে সাথে কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর হিসাব মতে বাংলাদেশে বেকার সংখ্যা ২৬ লাখ ৩১ হাজার হলেও প্রকৃত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি  কিন্তু উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি কর্মসংস্থান। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বাংলাদেশের সল্পশিক্ষিত বেকার যুব সমাজ বিশেষত নারীদের সাবলম্বী হতে অবদান রাখছে।  ২০১৫ সালে  বাংলাদেশের জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবদান ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং মোট কুটির শিল্পের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৩০ হাজার ৩০৬ টি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ২৬ হাজার এবং ৮লাখ ৫৭ হাজার। ২০১৮-১৯ সালে জিডিপিতে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পখাতের অবদান ছিল  ৩৫.১৪ শতাংশ।  এর বড় অংশই ছিল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের। সরকারি প্রনোদনায় বিগত বছরগুলোতে দেশের জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবদ...