Skip to main content

পরিবেশ ও অর্থনীতি || Econometry

পরিবেশের ক্ষতি করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়- এটা পরীক্ষিত সত্য। পরিবেশের সঙ্গে উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পরিবেশের ক্ষতি করে কোন দেশে সাময়িক উন্নয়ন হতে পারে; কিন্তু সেই উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না।যে উন্নয়ন মানুষের জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্য-স্বচ্ছন্দ্যের জন্য সহায়ক নয়; পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর, সে উন্নয়ন কারও কাম্য হতে পারে না।পরিবেশ দূষণের কারণে বিশ্বে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। 




পরিবেশ দূষণে ২০১৫ সালে শুধু শহরাঞ্চলেই মারা গেছে ৮০ হাজার ২৯৪ জন। 
বায়ুদূষণ, আর্সেনিকযুক্ত পানি, কর্মক্ষেত্রে দূষণ জনিত কারণে মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ২৬ লাখ ২৭ হাজার ৯২৬ ঘণ্টা। 
দূষণের কারণে মৃত্যু ও কর্মঘণ্টা হারিয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতি ৬৫২ কোটি ডলার বা ৫১ হাজার কোটি টাকা। 
এ ক্ষতি ওই সময় দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। 
২০১৫ সালে বিশ্বে যত মানুষ মারা গেছে তার ১৬ শতাংশ পরিবেশ দূষণের কারণে হলেও বাংলাদেশে এর পরিমাণ ছিল শতকরা ২৮ শতাংশ। এই হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। 

দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১১৩টি দেশের মধ্যে নিচের দিক থেকে ৯৭তম। আমাদের প্রাকৃতিক পৃথিবীর যে ক্ষতি—অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংস—আমরা করেছি, এর প্রভাব গুরুতর। এই গুরুতর প্রভাব শুধু বাতাস ও পানির ওপরই পড়ছে না, আমাদের ব্যবসার ওপরও পড়ছে। কারণ এসব ব্যবসা নির্ভর করে প্রাকৃতিক সুবিধা যেমন পরাগযোগ, পানির চক্র, সামুদ্রিক ও বন বাস্তুব্যবস্থা ও অন্যান্য সুবিধার ওপর। ফলে ‘প্রাকৃতিক পুঁজি’ সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা ব্যবসা খাতে পুঁজির মুনাফার হার বাড়াতে পারি। সব ক্ষেত্রে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এতে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পুঁজি ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাই। কিন্তু সেটা ‘সবুজ’ পরিবেশের ক্ষতি বা ধ্বংস সাধন করে নয়। একই সঙ্গে আমরা পরিবেশেরও উন্নতি চাই। কিন্তু সেটা উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছাড়া নয়।এক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বের ২০ শতাংশ মানুষ ৮০ শতাংশ প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ করে।বাজার অর্থনীতির সূত্রগুলো বলে, যতই উৎপাদন বাড়বে, বেচাকেনা বাড়বে, ততই জিডিপি বাড়বে। 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী উৎপাদনের চক্রের মধ্যে পড়ে পৃথিবীর মাটি, পানি, জলাশয়, বনভূমি বিপর্যস্ত হয়েছে।প্রতিবছর পৃথিবী থেকে ১৮ মিলিয়ন একর বনভূমি উধাও হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পৃথিবীর ১২ কোটি গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। মহাসাগরগুলোতে প্রতিবছর ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমছে। সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া মাইক্রোপ্লাস্টিক মাছের মাধ্যমে মানব শরীরে ঢুকে পড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত পেস্টিসাইডে পৃথিবীর প্রায় ৪০ ভাগ জমির উর্বরতা কমছে, মাটির নিচের অণুজীবগুলো মারা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে বায়ুদূষণের ফলে প্রতি বছর জিডিপির ১ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশ দূষণকারী শিল্প-কারখানা ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে নগরের বাতাস এবং ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হচ্ছে।
দূষণের কারণে ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।


এজন্য, সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে সঠিক নীতি ও আইন প্রণয়ন করতে হবে। আর শিল্পগুলোকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে।
শিল্পপার্ক/অর্থনৈতিক অঞ্চল যাতে শিল্প-কারখানায় সার্বক্ষণিক ইটিপি চালু রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে।আগামী ১০০ বছরের চিন্তা-চেতনাকে সামনে রেখে প্রতিটি নগরে ডিটেইল এরিয়া প্লান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।


লিখেছেন : 

 
ফারদিন ইসলাম
https://www.facebook.com/profile.php?id=100015288489768


Comments

Popular posts from this blog

উপকূলীয় অঞ্চলে শরণার্থী হতে পারে ৩০ মিলিয়ন মানুষ।

বাংলাদেশ প্রায়শই প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, টর্নেডো ইত্যাদি আঘাত হানে।এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এবং এর সাথে যুক্ত ঝড়ের তীব্রতা সবচেয়ে বিপর্যয়কর। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের তীব্র বিপর্যয়ের প্রভাবের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এই বিপর্যয়কর প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ফলস্বরূপ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার ন্যায়।গত 110 বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের দ্বারা প্রভাবিত জলবায়ু এবং ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি, তীব্রতার প্রবণতা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা 2 ° C থেকে 4 ° C এবং সমুদ্র স্তর 0.3 মিটার থেকে 1.0 মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। Source:Carbon Brief বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন একটি চূড়ান্ত বিষয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশ সারা বছর মোটামুটি প্রত্যক্ষ রেডিয়েশন গ্রহণ করে এবং তুলনামূলকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা বজায় রাখে। এবার যদি আমরা বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অর্থনীতির...

পর্যটন শিল্পে করোনা ভাইরাসের প্রভাব || Econometry

পর্যটন হল এক ধরনের বিনোদন, অবসর অথবা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থান কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করাকে বুঝায়।  ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটন শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশে পরিচিত-অপরিচিত অনেক পর্যটন-আকর্ষণীয় স্থান আছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন।  এর মধ্যে প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, অরণ্য ইত্যাদি অন্যতম। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত ।     এছাড়াও অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে,  চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকত, প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা, চাঁদপুর মিনি কক্সবাজার, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, সোমপুর বৌদ্ধবিহার, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর,  মহাস্থানগড় এবং সিলেটের জাফলং উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি। ধারণা করা হয়েছিল ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ২০...

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিকভাবে আমের ভূমিকা

আম আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধির এক বিরাট সুযোগ হতে পারে। একটি উৎকৃষ্ট সুস্বাদু ফল হিসেবে আমের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। সারা দেশে আম উৎপন্ন হয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার একর জমিতে। সুতরাং এত বিপুল পরিমাণ জমিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনশক্তি সম্পৃক্ত থাকে। বাগান চাষ ও পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক ছাড়াও শুধু ফলনের মৌসুমেই অর্থাৎ বছরের প্রায় ৪/৫ মাস প্রচুর লোক সারা দেশে আম সংক্রান্ত কর্মকাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে।   নিম্নোক্তভাবে এক্ষেত্রে জনশক্তির কর্মসংস্থান হতে পারেঃ ১. আম চাষ ও পরিচর্যার মাধ্যমে ২. সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ৩. আম ও আমজাত দ্রব্যাদি পরিবহনের মাধ্যমে ৪. আম ও আমজাত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ৫. আম শিল্প ১) আম চাষ ও পরিচর্যার মাধ্যমেঃ ভালো ফলনের জন্য আম গাছে পরিকল্পনা- মাফিক পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে পূর্ণতা অর্থাৎ আম গাছের সঠিক পরিচর্যা ঠিকমতো না হলে ফলনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রতি বছর কমপক্ষে ৪/৫ মাস আম বাগান পরিচর্যার জন্য প্রতি তিন একর আয়তন বিশিষ্ট আম বাগানে ৫ জন শ্রমিক কর্মরত থাকেন। ...