Skip to main content

ভুট্টা ও বাংলাদেশের অর্থনীতি || Econometry

ভুট্টা (বৈজ্ঞানিক নাম Zea mays) একপ্রকারের খাদ্য শস্য। 
এই শস্যটির আদি উৎপত্তিস্থল মেসোআমেরিকা।ইউরোপীয়রা আমেরিকা মহাদেশে পদার্পণ করার পর এটি পৃথিবীর অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।
আমাদের দেশে প্রায় রবি ও খরিফ মৌসুম মিলে ১০ লক্ষ একর জমিতে ভুট্টা চাষ হয় এবং সারা বাংলাদেশ দিন দিন ভুট্টার চাষ বাড়ছে।
আমরা জানি, পোল্ট্রি খাতে বছরে ফিডের চাহিদা প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ খাতে ফিডের প্রয়োজন প্রায় ২৭ লক্ষ মেট্রিক টন, 
যার ৫০% এরও বেশি আসে ভুট্টা থেকে।




আমাদের দেশে ভুট্টার চাষ শুরু হয়েছিল ভুট্টার কম্পোজিট জাতের বীজ দিয়ে সেই ১৯৭৫ সনে।ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ৪০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হতে পারে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কৃষকরা উচ্চফলনশীল ভুট্টা বীজের ব্যবহার বাড়িয়েছে।মৎস্য ও পশুখাদ্য হিসেবে দেশে ভুট্টার চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সরকার ভুট্টা আবাদে বিশেষ জোর দিয়েছে।


২০০২-০৩ সনে এ দেশে মোট ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ১.৭৫ লাখ টন। 
২০১২-১৩ সনে সে ভুট্টার ফলন দাঁড়িয়েছে ২১.৭৮ লাখ টনে। 
গত দশ-এগার বছরে এ দেশে ভুট্টার ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ গুণেরও অধিক। 
২০১৩ সনে বাংলাদেশের ৩.১২ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে, 
যা ২০১০ সনে ছিল ২.৮৩ লাখ হেক্টর। 

বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি ভুট্টার ফল বেশ ভালো। যেখানে বিশ্বে ভুট্টার হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৪.৯ মেট্রিক টন, বাংলাদেশে তা ৫.৩৭ মেট্রিক টন।বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আমরা যদি চিন্তা করি কেন ভুট্টা চাষ দিন দিন বাড়ছে, তাহলে যে বিষয়গুলো আমাদের নজর আসে সেগুলো হলো-

• পোল্ট্রি, মৎস্য ও পশুসম্পদ শিল্পের জন্য ফিডের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।এছাড়াও ভুট্টা C4 (সি ফোর) উদ্ভিদ হওয়ায় কারণে সোলার শক্তিকে কাজে লাগতে পারে এবং পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থাপনা না থাকলেও খরা সহ্য করে ভুট্টা গাছ তার স্বাভাবিক ফলন নিশ্চিত করতে পারে।

• ইদানীংকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় জুম চাষের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ ব্যাপক হারে বাড়ছে।

• সেচ কম লাগার কারণে বিদ্যুৎ এর খরচ কম হয় এবং ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ারের কোন ক্ষতি হয় না, যা পরিবেশের ভারসাম্যকে রক্ষা করে।



ভুট্টাতে রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ অত্যন্ত কম, ফলে উৎপাদন খরচও কম। যে কারণে কৃষকরা ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।দেশের অনেক এলাকাতেই হাইব্রিড ভুট্টার আবাদের বিস্তৃতি ঘটছে। আমাদের ভুট্টা গবেষণা ভালোই এগিয়েছে। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হাইব্রিড জাতগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আমাদের গবেষণার কৌশল খানিকটা পাল্টাতে হবে।আমাদের বিজ্ঞানীদের সৃষ্ট হাইব্রিড ভুট্টা বীজ ব্যবহার বাড়লে ভুট্টা ফসল উৎপাদনের খরচও খানিকটা হ্রাস পাবে বলে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ আরো লাভজনক হয়ে উঠবে।

লিখেছেন :

ফারদিন ইসলাম
https://www.facebook.com/profile.php?id=100015288489768

Comments

Popular posts from this blog

উপকূলীয় অঞ্চলে শরণার্থী হতে পারে ৩০ মিলিয়ন মানুষ।

বাংলাদেশ প্রায়শই প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, টর্নেডো ইত্যাদি আঘাত হানে।এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এবং এর সাথে যুক্ত ঝড়ের তীব্রতা সবচেয়ে বিপর্যয়কর। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের তীব্র বিপর্যয়ের প্রভাবের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এই বিপর্যয়কর প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ফলস্বরূপ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার ন্যায়।গত 110 বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের দ্বারা প্রভাবিত জলবায়ু এবং ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি, তীব্রতার প্রবণতা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা 2 ° C থেকে 4 ° C এবং সমুদ্র স্তর 0.3 মিটার থেকে 1.0 মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। Source:Carbon Brief বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন একটি চূড়ান্ত বিষয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশ সারা বছর মোটামুটি প্রত্যক্ষ রেডিয়েশন গ্রহণ করে এবং তুলনামূলকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা বজায় রাখে। এবার যদি আমরা বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অর্থনীতির...

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিকভাবে আমের ভূমিকা

আম আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধির এক বিরাট সুযোগ হতে পারে। একটি উৎকৃষ্ট সুস্বাদু ফল হিসেবে আমের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। সারা দেশে আম উৎপন্ন হয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার একর জমিতে। সুতরাং এত বিপুল পরিমাণ জমিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনশক্তি সম্পৃক্ত থাকে। বাগান চাষ ও পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক ছাড়াও শুধু ফলনের মৌসুমেই অর্থাৎ বছরের প্রায় ৪/৫ মাস প্রচুর লোক সারা দেশে আম সংক্রান্ত কর্মকাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে।   নিম্নোক্তভাবে এক্ষেত্রে জনশক্তির কর্মসংস্থান হতে পারেঃ ১. আম চাষ ও পরিচর্যার মাধ্যমে ২. সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ৩. আম ও আমজাত দ্রব্যাদি পরিবহনের মাধ্যমে ৪. আম ও আমজাত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ৫. আম শিল্প ১) আম চাষ ও পরিচর্যার মাধ্যমেঃ ভালো ফলনের জন্য আম গাছে পরিকল্পনা- মাফিক পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে পূর্ণতা অর্থাৎ আম গাছের সঠিক পরিচর্যা ঠিকমতো না হলে ফলনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রতি বছর কমপক্ষে ৪/৫ মাস আম বাগান পরিচর্যার জন্য প্রতি তিন একর আয়তন বিশিষ্ট আম বাগানে ৫ জন শ্রমিক কর্মরত থাকেন। ...

The relevance of Neo-liberalism by drawing evidence from the current state of covid-19 pandemic in Bangladesh || Econometry

Neoliberalism is an economic and political ideology associated with laisezz-faire economic liberalism and free market capitalism. It is actually restatement of classical liberalism plus something else. In the modern capitalistic world many developed countries like UK, Netherlands follow neoliberalism.  So if we see what neoliberalism focuses, we find economic liberalization, privatization,deregulation, globalization, free trade, austerity, reductions in government spendings.         ‌ Neoliberalism was running very well until the corona virus rises . We find a changed world in this corona pandemic situation.  Empty streets, closed shops, clear skies such unusual scenario all over the world. The news about economy is alarming and the situation has triggered the economic contraction in the history of capitalism. If  we look at the situation of our country, we find thousands of workers became unemployed and many of businesses are in debt situati...