Skip to main content

করোনায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প: সম্ভাবনা ও ঝুঁকি | Econometry

বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনা। করোনার কালো থাবায় ঝুঁকিতে আছে বিশ্ব অর্থনীতি।

এক্ষেত্রে কি হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা খাত পোশাক শিল্পের? বর্তমান প্রেক্ষিতে এর সম্ভাবনা  ও ঝুঁকি নিয়েই আলোচনা করছি।

ইতোমধ্যেই সারাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০০০০ ছাড়িয়ে, সাথে চলছে লকডাউন। যার ফলে বন্ধ হয়ে আছে এ দেশের পোশাক কারখানাগুলোও। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প পোশাক শিল্প। স্থবির হয়ে থাকা পোশাক শিল্প যে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মত উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় বাঁধা সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ যে লকডাউন চলবে নাকি অর্থনীতি সচল হবে। এক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি পোশাক শিল্পকে পুনরায় চালু করার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে। এ বৈশ্বিক মহামারীর মাঝেও অর্থনীতিকে কিভাবে সচল রাখতে পারে পোশাক শিল্প তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনায় আসছি।

প্রথমেই আসি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে
      সংক্রামক রোগ হওয়ায় করোনার ঝুঁকি অনেক বেশি কিন্তু এ ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যক্তিগত সুরক্ষাকেই ও সচেতনতাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সারা বিশ্বেই। ব্যক্তিগত সুরক্ষার কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আছে Personal Protection Equipment  (PPE) এর কথা। বর্তমানে স্বাস্থ্যখাতেও যে আমরা কি পরিমাণ পিছিয়ে আছি তা আমাদের করোনাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। PPE যা বাংলাদেশের জন্য স্থানীয়ভাবেই তৈরী করা সম্ভবপর ছিলো তা সত্ত্বেও প্রাথমিকভাবে আমাদের PPE সংগ্রহ করতে হয়েছিলো চীন থেকে। অথচ যখন ইউরোপে করোনার বিস্তার শুরু হয় তখনই স্থানীয় সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক চাহিদার কথা চিন্তা করে পোশাক শিল্পকে কাজে লাগিয়ে PPE উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা মেটানোসহ বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভবপর ছিলো। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এক্ষেত্রে আমাদের দূরদার্শিকতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়নের ঘাটতি রয়েছে বলতে হবে। তবে এই সম্ভাবনা কে এখনো উড়িয়ে দেয়া যায়না। বর্তমান বিশ্বে করোনার প্রকোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দিনদিন যেমন বাড়ছে আক্রান্তের হার তেমনি বাড়ছে মৃত্যুহারও। নিঃসন্দেহে এতে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা খাতে প্রয়োজন হচ্ছে আরো বেশি পরিমাণ PPE। আর এদিকে চীনের পরেই রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে অবস্হান বাংলাদেশের। আর বৈশ্বিক রাজনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তুলনায় বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকার পাওয়ার আশা আমরা রাখতে পারি। তবে ইতোমধ্যেই WHO সার্টিফাইড PPE রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ এবং দেশের ১২ টি পোশাক কারখানা রপ্তানিযোগ্য PPE উৎপাদন করছে। কিন্তু সারাদেশে আনুমানিক ৪ হাজারেরও অধিক পোশাক কারখানা রয়েছে। সুতরাং, ১২ টি পোশাক কারখানায় উৎপাদিত PPE দেশের রপ্তানিখাতে কতটুকু উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এমতাবস্থায় বাকি পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে যদি ১০০০ পোশাক কারখানাও PPE তৈরির কার্যক্রম শুরু করতে পারে তাহলে বর্তমানে করোনার প্রকোপে বিধ্বস্ত ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রভাবের আশা আমরা করতে পারি। এক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকতে পারে স্থানীয়ভাবে তৈরি PPE এর লেভেল ও গুনগত মান নিয়ে।আমাদের দেশে  WHO এর গাইডলাইনানুযায়ী Level-1 এবং 2 এর PPE তৈরী করা হয় যা ক্যমিক্যাল রেসিস্টেন্ট ক্লথিং এর তৈরী। আর Level-3 এবং 4 এর PPE তৈরীতে প্রয়োজন হয় আলাদা ফেব্রিক ও মেটারিয়াল যা আমদানি করতে হবে অন্য দেশ হতে। বর্তমানে বাংলাদেশের চীনের সাথে ফ্লাইট চালু থাকায় বাংলাদেশ চীন হতে আমদানির মাধ্যমে দেশেই অভ্যন্তরীণ চাহিদসহ  বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে  তৈরী করতে পারে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন PPE তবে এক্ষেত্রে WHO এর সাহায্য বাংলাদেশের কাম্য। তবে Level-3 ও 4  এর PPE  তৈরীর ক্ষেত্রে WHO গাইডলাইনের  অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে পোশাক কারখানার ডাস্ট ফ্রি এবং মেডিকেল গ্রেড পরিবেশ যা তৈরীতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে।

     এবারে আসা যাক বাকি পোশাক কারখানাগুলোর কথায় যেগুলো নিয়জিত থাকবে দেশীয় ঔ বৈদাশিক সাধারণ পোশাকের চাহিদা মেটানোর কাজে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের  পোশাক শিল্প সুইডেনসহ ইউরোপের কিছু দেশের অর্ডার রয়েছে যা অনুযায়ী রপ্তানি কার্যক্রম চালু রাখা গেলে ভবিষ্যতেও পোশাক কারখানা অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে। অন্যথায় কার্যক্রম বন্ধ থাকলে অন্যান্য দেশ ভিয়েতনামমুখীও হতে পারে।




পোশাক শিল্প চালু করার সাথে করোনা ঝুঁকি

       পোশাক কারখানা গুলো যদি খুলে দেয়া হয় এক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পোশাক শ্রমিকগণ তাদের কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করবেন ফলে প্রথমে সবচেয়ে বড় যে ঝুঁকি দেখা যায় তা হলো কম্যুউনিটি ট্রান্সমিশন আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা। যার ফলে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত ঢাকা আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ভাবা হচ্ছে Herd immunity  এর কথা।  জানা যাক Herd immunity কিভাবে কাজ করবে করোনার বিরুদ্ধে।

     একজন ব্যাক্তি যদি Covid-19 এ আক্রান্ত হয় পরবর্তীতে সে সুস্থ হলে তার শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্হা তৈরি হয় এবং যত বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে একসময় ভাইরাসের প্রতিরোধ  ব্যবস্থার বলয়ও তত দৃঢ় হবে ফলে থেমে যেতে পারে সংক্রমণ।  কিন্তু Herd immunity  আমাদের দেশের ক্ষেত্রে কতটুকু  কার্যকর ভুমিকা পালন করবে সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।  কিন্তু সংক্রমণের কথা ভেবেও যদি পোশাক শিল্প দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকে তাহলে এর ফলাফল হবে ভয়াবহ।

প্রথমেই বলতে হবে পোশাক শিল্পের মজুদকৃত কাঁচামালের কথা। দীর্ঘদিন লকডাউনে থেকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে এসব কাঁচামাল যার ফলে লোকসানের সম্মুখীন হয়ে মুখ থুবড়ে পরতে পারে এ দেশের পোশাক শিল্প। দীর্ঘদিনের লকডাউনে থেকে উৎপাদনকার্য ব্যাহত হবার ফলে পোশাক কারখানা মালিকদের প্রথমেই যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তা হলো পোশাক শ্রমিকদের নায্য মজুরী দিতে না পারা যার ফলে ছাঁটাই হতে পারে লক্ষাধিক শ্রমিক। বাড়তে পারে বেকারত্বের হার। তখন শ্রমিক অসোন্তষের ফলে বিক্ষোভ শুরু হলে বৈদেশিক বাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হলে বাজার হারাতে পারে বাংলাদেশ।

     আর এদিকে বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর শ্বাস ফেলতে থাকা ভিয়েতনাম দখল করে ফেলতে বৈদাশিক বাজারে বাংলাদেশের স্থান। এছাড়াও করোনা মোকাবেলায় বর্তমান বিশ্বে অন্যতম সফল দেশ ভিয়েতনাম। আক্রান্তের হার কম এবং মৃতের হার ০ হওয়ায় ইতোমধ্যে তারা তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও চালু রেখেছে। এমতাবস্থায় ভিয়েতনাম যদি বাংলাদেশের বাজার দখল করে ফেলে তা পুনরুদ্ধার করা বাংলাদেশের পক্ষে কতটুকু সম্ভব হবে সে বিষয়েও রয়েছে সন্দেহ। এছাড়াও পোশাক শিল্প থেকে বেকার হওয়া লক্ষাধিক শ্রমিক যে নিরুপায় হয়ে অভাবের সময় অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হবে কি হবেনা তা নিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা।

সুতরাং, সার্বিকদিক বিবেচনায় বর্তমানে এ দেশের পোশাক শিল্পকে চালু করাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই এগোতে হবে বাংলাদেশকে। যেখানে বিপদের অভয়ারণ্য সেখানে ভয়ে  গুটিয়ে না থেকে বিপদের সাথে লড়াই করে অগ্রসর হওয়াটাই শ্রেয় নয়

তথ্যসুত্র:

1. Defence research forum
2. BBC

লিখেছেনঃ

সা'দ ইবনে সারোয়ার
https://www.facebook.com/saad.sarwar.315

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

উপকূলীয় অঞ্চলে শরণার্থী হতে পারে ৩০ মিলিয়ন মানুষ।

বাংলাদেশ প্রায়শই প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, টর্নেডো ইত্যাদি আঘাত হানে।এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এবং এর সাথে যুক্ত ঝড়ের তীব্রতা সবচেয়ে বিপর্যয়কর। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের তীব্র বিপর্যয়ের প্রভাবের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এই বিপর্যয়কর প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ফলস্বরূপ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার ন্যায়।গত 110 বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের দ্বারা প্রভাবিত জলবায়ু এবং ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি, তীব্রতার প্রবণতা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা 2 ° C থেকে 4 ° C এবং সমুদ্র স্তর 0.3 মিটার থেকে 1.0 মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। Source:Carbon Brief বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন একটি চূড়ান্ত বিষয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশ সারা বছর মোটামুটি প্রত্যক্ষ রেডিয়েশন গ্রহণ করে এবং তুলনামূলকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা বজায় রাখে। এবার যদি আমরা বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অর্থনীতির...

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিকভাবে আমের ভূমিকা

আম আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধির এক বিরাট সুযোগ হতে পারে। একটি উৎকৃষ্ট সুস্বাদু ফল হিসেবে আমের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। সারা দেশে আম উৎপন্ন হয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার একর জমিতে। সুতরাং এত বিপুল পরিমাণ জমিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনশক্তি সম্পৃক্ত থাকে। বাগান চাষ ও পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক ছাড়াও শুধু ফলনের মৌসুমেই অর্থাৎ বছরের প্রায় ৪/৫ মাস প্রচুর লোক সারা দেশে আম সংক্রান্ত কর্মকাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে।   নিম্নোক্তভাবে এক্ষেত্রে জনশক্তির কর্মসংস্থান হতে পারেঃ ১. আম চাষ ও পরিচর্যার মাধ্যমে ২. সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ৩. আম ও আমজাত দ্রব্যাদি পরিবহনের মাধ্যমে ৪. আম ও আমজাত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ৫. আম শিল্প ১) আম চাষ ও পরিচর্যার মাধ্যমেঃ ভালো ফলনের জন্য আম গাছে পরিকল্পনা- মাফিক পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে পূর্ণতা অর্থাৎ আম গাছের সঠিক পরিচর্যা ঠিকমতো না হলে ফলনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রতি বছর কমপক্ষে ৪/৫ মাস আম বাগান পরিচর্যার জন্য প্রতি তিন একর আয়তন বিশিষ্ট আম বাগানে ৫ জন শ্রমিক কর্মরত থাকেন। ...

The relevance of Neo-liberalism by drawing evidence from the current state of covid-19 pandemic in Bangladesh || Econometry

Neoliberalism is an economic and political ideology associated with laisezz-faire economic liberalism and free market capitalism. It is actually restatement of classical liberalism plus something else. In the modern capitalistic world many developed countries like UK, Netherlands follow neoliberalism.  So if we see what neoliberalism focuses, we find economic liberalization, privatization,deregulation, globalization, free trade, austerity, reductions in government spendings.         ‌ Neoliberalism was running very well until the corona virus rises . We find a changed world in this corona pandemic situation.  Empty streets, closed shops, clear skies such unusual scenario all over the world. The news about economy is alarming and the situation has triggered the economic contraction in the history of capitalism. If  we look at the situation of our country, we find thousands of workers became unemployed and many of businesses are in debt situati...