Skip to main content

অর্থনীতিতে 'চা'

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চায়ের জনপ্রিয়তার কথা আমরা সকলেই জানি৷ আর বাঙালিদের আড্ডা মানেই ‘চা’৷ চায়ের সাথে সিঙাড়া, চানাচুর বা ঝালমুড়ি হলে তো কথাই নেই৷
 বাংলাদেশে অনেক ধরনের চা পাওয়া যায়। তার মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গ্রিন টি বা সবুজ চা।
চীন হলো চায়ের আদি জন্মস্থান৷ বেশিরভাগ গ্রিন টি আসে চীন থেকে৷ গ্রিন টি বা সবুজ চা তে  রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য প্রয়োজন৷ সবুজ চা’কে অনেক সময় জাদুর ওষুধ বলা হয়ে থাকে৷  গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে ক্যানসার, আল্সহাইমার, ব্লাড প্রেশার, ডায়েবেটিস এর মতো কঠিন অসুখকে দূরে রাখতে সাহায্য করে৷
প্রথম চা গাছ রোপণ থেকে ধরলে বাংলাদেশে চা শিল্পের বয়স ১৭৮ বছর৷ সুদীর্ঘ এ সময়ে দেশের মানচিত্র বদলেছে দু'বার৷
 তবে চা শিল্পের অগ্রযাত্রা থামেনি৷ অমিত সম্ভাবনার অনুপাতে অনেকটা অর্জিত না হলেও এই শিল্পের অর্জনও কিন্তু কম নয়৷
তবে প্রথম বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয় সিলেটে, ১৮৫৪ সালে৷ সে বছর সিলেট শহরের উপকণ্ঠে মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়৷



এ বাগানে চা উত্‍পাদনের মধ্য দিয়ে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়৷ তখন থেকে ধীরে ধীরে চা এ দেশে একটি কৃষি ভিত্তিক শ্রমঘণ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে৷
কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, আমদানি বিকল্প দ্রব্য উত্‍পাদন এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসকরণের মাধ্যমে চা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷
চা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল৷  একসময় বিটিশরা চা ফ্রিতে দিয়ে চায়ের স্বাদ বুঝিয়েছিল বাঙ্গালীকে তার পর থেকে চা খেতে ভূলেনি বাংলার মানুষ।
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ক্রমাগত নগরায়নের ফলে ও জনতার শহরমুখিতার কারণে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে৷ এছাড়া সামজিক উন্নয়নের ফলেও চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে৷ বিগত তিন দশক ধরে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে৷ ফলে বাংলাদেশ এক সময় চা রপ্তানি করলেও এখন দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষম হচ্ছে না।
একসময় যে চা রপ্তানিতে অনেক ভালো অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ ২০১০ সাল থেকে এই বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করতে চা আমদানি শুরু হয়। বাংলাদেশের চায়ের চাহিদা ৯ কোটি লাখ থাকলেও চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চা উৎপাদনের ইতিহাসে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। কিন্তু তার পরের বছর উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ৭ কোটি ৮০ লাখ কেজিতে। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ কোটি ২০ লাখ কেজি উৎপাদন হয়।২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৪ লাখ কেজি চা আমদানি হয়। অর্থনীতি চা আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে কি-না এ নিয়ে যে শঙ্কা জন্মে ছিল তবে গত কয়েক বছরে চা উৎপাদনের মাধ্যমে কেটে গেছে।
বাংলাদেশে ১৬৬ বছরের ইতিহাসে এবার সর্বকালের সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে। গত মৌসুমে ২০১৯ (ডিসেম্বর) ৯ কোটি লাখের অধিক কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ১৯৮৯ সালে চা উৎপাদনে বিশ্বে ১২তম স্থানে ছিল এবং গত শতকের শেষের দিকে ১১তম অবস্থানে ছিল, কয়েক বছর আগে ছিল দশম অবস্থানে। চা রপ্তানি তে আবার ‘বাংলাদেশ চা বোর্ড’ চা শিল্পের উন্নয়নের জন্য কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা ‘ভিশন ২০২৫’-এর বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এর আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ষিক ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের মাইলফলক অতিক্রমের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে চা শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম এবং সুদূরপ্রসারী৷ জিডিপিতে চা খাতের অবদান ০ দশমিক ৮১ শতাংশ৷ দেশ স্বাধীনের সময় দেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি। তখন ৩ কোটি কেজির মতো চা উৎপাদন হতো। বর্তমানে চা বাগানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৬টিতে। গত ১০ বছরে পৃথিবীতে চায়ের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে৷ এই চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে বাংলাদেশ, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কা পৃথিবীর প্রায় ৫২ ভাগ চায়ের চাহিদা পূরণ করছে৷


লেখকঃ

শাহাদাত হোসেন অভ্র
https://www.facebook.com/Auvroo



Comments

  1. Wow.Don't know who you are. But yeah your written skill is so favourable. Go ahead Shahadat

    ReplyDelete
  2. Shahadat, congratulations! So happy to see you people are coming ahead with many good ideas. So happy for your guys! Best wishes

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

পর্যটন শিল্পে করোনা ভাইরাসের প্রভাব || Econometry

পর্যটন হল এক ধরনের বিনোদন, অবসর অথবা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থান কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করাকে বুঝায়।  ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটন শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশে পরিচিত-অপরিচিত অনেক পর্যটন-আকর্ষণীয় স্থান আছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন।  এর মধ্যে প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, অরণ্য ইত্যাদি অন্যতম। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত ।     এছাড়াও অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে,  চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকত, প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা, চাঁদপুর মিনি কক্সবাজার, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, সোমপুর বৌদ্ধবিহার, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর,  মহাস্থানগড় এবং সিলেটের জাফলং উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি। ধারণা করা হয়েছিল ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ২০...

করোনায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প: সম্ভাবনা ও ঝুঁকি | Econometry

বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনা। করোনার কালো থাবায় ঝুঁকিতে আছে বিশ্ব অর্থনীতি। এক্ষেত্রে কি হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা খাত পোশাক শিল্পের? বর্তমান প্রেক্ষিতে এর সম্ভাবনা  ও ঝুঁকি নিয়েই আলোচনা করছি। ইতোমধ্যেই সারাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০০০০ ছাড়িয়ে, সাথে চলছে লকডাউন। যার ফলে বন্ধ হয়ে আছে এ দেশের পোশাক কারখানাগুলোও। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প পোশাক শিল্প। স্থবির হয়ে থাকা পোশাক শিল্প যে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মত উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় বাঁধা সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ যে লকডাউন চলবে নাকি অর্থনীতি সচল হবে। এক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি পোশাক শিল্পকে পুনরায় চালু করার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে। এ বৈশ্বিক মহামারীর মাঝেও অর্থনীতিকে কিভাবে সচল রাখতে পারে পোশাক শিল্প তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনায় আসছি। প্রথমেই আসি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে       সংক্রামক রোগ হওয়ায় করোনার ঝুঁকি অনেক বেশি কিন্তু এ ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যক্তিগ...

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনির্ভর অর্থনীতি

তৃতীয় বার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮৫-৯০) বলা হয়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মাথাপিছু জমির পরিমান সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-২০১৫) বলা হয় বছরে প্রায় ১শতাংশ হারে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে এবং এর সাথে সাথে কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর হিসাব মতে বাংলাদেশে বেকার সংখ্যা ২৬ লাখ ৩১ হাজার হলেও প্রকৃত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি  কিন্তু উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি কর্মসংস্থান। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বাংলাদেশের সল্পশিক্ষিত বেকার যুব সমাজ বিশেষত নারীদের সাবলম্বী হতে অবদান রাখছে।  ২০১৫ সালে  বাংলাদেশের জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবদান ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং মোট কুটির শিল্পের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৩০ হাজার ৩০৬ টি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ২৬ হাজার এবং ৮লাখ ৫৭ হাজার। ২০১৮-১৯ সালে জিডিপিতে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পখাতের অবদান ছিল  ৩৫.১৪ শতাংশ।  এর বড় অংশই ছিল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের। সরকারি প্রনোদনায় বিগত বছরগুলোতে দেশের জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবদ...