নদীমাতৃক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী পদ্মা। পদ্মা নদী ভারত ও ভারতের উত্তরবঙ্গে গঙ্গা এবং বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত। এর উৎপত্তিস্থল মধ্য হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহে। উত্তর ভারতের কয়েকটি রাজ্য অতিক্রম করে গঙ্গা রাজশাহী জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীটি গোয়ালন্দের নিকট ব্রহ্মপুত্রের প্রধান ধারা যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। পরে শিবচর, নড়িয়া দিয়ে চাঁদপুরে এসে পদ্মা-মেঘনা মিলিত হয়ে বরিশাল ও নোয়াখালী অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
বহুল আলোচিত পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ই ডিসেম্বর। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ স্থাপন হবে যার মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ এবং শরীয়তপুর যুক্ত হবে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট ষ্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির (truss bridge) ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির প্রায় ৪.৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
এখন পর্যন্ত পদ্মার ওপর যেসব সেতু রয়েছে - হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (পাবনা,শুধুমাত্র রেল চলাচলের জন্য), লালন শাহ সেতু (পাবনা), পদ্মা বহুমুখী সেতু {মাওয়া-জাজিরা(চলমান)}, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু {আরিচা (প্রস্তাবিত)} এদের মধ্যে হার্ডিঞ্জ এবং লালন শাহ সেতু পদ্মা নদীতে নৌযান নির্ভরতা খুবই সামান্য পরিমাণে হ্রাস করতে পেরেছে কারণ ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে মাঙয়া-কাওরাকান্দি এবং আরিচা-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের উপর ই নির্ভরশীল। পদ্মাসেতুর হবার পরে পদ্মা নদীতে নৌযান নির্ভরতা প্রায় বেশিরভা নির্মুল হয়ে যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় প্রত্যেকটি জেলার লোকজনই যাতায়াতের জন্য পদ্মা নদী ব্যবহার করে থাকে। পদ্মাসেতুর হবার পরে দেশে নদীপথে নৌযান চলাচলের প্রায় ৬০ ভাগেরও বেশি বিলুপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক।
১. পদ্মা সেতুর ফলে এদেশে প্রতিবছর ১.৯% হারে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে,
২. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ১.২২%,
৩. পদ্মা সেতু ও উভয় পাড়ের পর্যটন থেকেই প্রতিবছর কয়েক শ কোটি টাকা আয় হবে ,
৪. দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি উপকূলীয় জেলার সাথে ৫. রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ শক্তিশালী হবে,
৬. নির্মিত হওয়ার ৩০/৩১ বছরের মধ্যে জিডিপি ৬০০০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে,
৭. সেতুর উভয় পাশেই ব্যাপক হারে শিল্পায়ন ও নগরায়ন ঘটবে যা অর্থনীতির চাকা সচল রাখবে,
৮. প্রায় ২.৫ কোটির অধিক বেকারের কর্মসংস্থান ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে।এছাড়াও আরও অগণিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে।
বাংলাদেশে পদ্মার ভৌগোলিক অবস্থানটা বেশ জটিল। নদীর ব্যবহার কমে গেলে প্রাকৃতিক ভাবেই নদী তার গতিপথ পরিবর্তনে ব্যকুল হয়ে পড়ে। পদ্মাসেতু নির্মাণ পরবর্তী সময়ে এটাই সবচেয়ে বড় ভয়। বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, পদ্মা বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদীর একটি যেটি বছরে প্রায় ১.২ বিলিয়ন টনের বেশি পলি মাটি বয়ে আনে। পদ্মা শাসন ব্যতিত পলি এসে নদী ভরাট হওয়া অব্যাহত থাকলে ভৌগোলিক কারণে এর প্রভাব পড়বে দেশের প্রতিটি নদ-নদীর উপর। এতদিন পর্যন্ত আমরা মোটামুটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথাই জেনেছি। এবার একটু বিশ্লেষণ করা যাক এর বাইরেও পদ্মাসেতু পরবর্তী অদৃশ্য যে ঝুঁকি আমাদের সামনে হানা দিতে পারে-
১. দেশের ৪০ শতাংশের বেশি জেলের জীবিকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে,
২. মৎস্যখাতের উপর প্ভাব পড়ার ফলে সমগ্য দেশে আমিষের ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে,
৩. দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিব্যবস্থায় পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে,
৪. বর্ষায় অতিবন্যা এবং গ্রীষ্মে পানিশূন্যতা হতে পারে,
৫. স্বল্প ব্যয়ে মালামাল স্থানান্তরিত করা ক্রমান্বয়ে কঠিন হয়ে পড়বে,
৬. সর্বোপরি মেঘনা এবং যমুনা সরাসরি পদ্মা নদীর সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এদেরও গতিপথের পরিবর্তন আসতে পারে এমনকি নতুন উপনদীও সৃষ্টি হতেই পারে যা ইতিহাস থেকে আমরা ইঙ্গিত পাই।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন পদ্মা নদী শাসনের লক্ষে অনেকগুলো পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে। এর পাশাপাশি আরও যা করতে হবে বলে আমি মনে করি-
১. নদীবিশেষজ্ঞান সম্পর্কিত বিদ্যা Potology'র উপর বিশেষ ভাবে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।
২. নিয়মিত পরিকল্পিত খনন করতে হবে যাতে পলি জমতে না পারে। মনে রাখতে হবে খনন ই প্রধান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা পলি জমে নদী ভরাটরোধের জন্য,
৩. যমুনা এবং মেঘনা নদীর সাথে পদ্মার মিলনস্থলে অবাধে জল চলাচল সুনিশ্চিত করতে হবে,
৪. পদ্মাসেতুর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের নদীর পাড় ভাঙন রোধে পাড় বাধা সহ যাবতীয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে,
৫. পদ্মার উপনদী এবং শাখানদীগুলোর অবাধে জল চলাচল সুনিশ্চিত করতে হবে।
পদ্মাসেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশের জন্য এটি আশীর্বাদস্বরূপ। নিঃসন্দেহে এটি সমগ্র দেশের বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিবে। পদ্মাসেতুর অর্থনৈতিক দিকের পাশাপাশি পদ্মার তথা সমগ্র দেশের নদীর ভবিষ্যৎ নিয়েও আমাদের ভাবা উচিত। তাই আমাদের নদীবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিদ্যা Potomology'র উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তা নাহলে, পদ্মার পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের স্থানীয় ভাষায় বলতে হয় "সেতু হলে, নদী মরে যাবে যে!"
লেখকঃ
বহুল আলোচিত পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ই ডিসেম্বর। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ স্থাপন হবে যার মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ এবং শরীয়তপুর যুক্ত হবে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট ষ্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির (truss bridge) ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির প্রায় ৪.৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
এখন পর্যন্ত পদ্মার ওপর যেসব সেতু রয়েছে - হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (পাবনা,শুধুমাত্র রেল চলাচলের জন্য), লালন শাহ সেতু (পাবনা), পদ্মা বহুমুখী সেতু {মাওয়া-জাজিরা(চলমান)}, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু {আরিচা (প্রস্তাবিত)} এদের মধ্যে হার্ডিঞ্জ এবং লালন শাহ সেতু পদ্মা নদীতে নৌযান নির্ভরতা খুবই সামান্য পরিমাণে হ্রাস করতে পেরেছে কারণ ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে মাঙয়া-কাওরাকান্দি এবং আরিচা-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের উপর ই নির্ভরশীল। পদ্মাসেতুর হবার পরে পদ্মা নদীতে নৌযান নির্ভরতা প্রায় বেশিরভা নির্মুল হয়ে যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় প্রত্যেকটি জেলার লোকজনই যাতায়াতের জন্য পদ্মা নদী ব্যবহার করে থাকে। পদ্মাসেতুর হবার পরে দেশে নদীপথে নৌযান চলাচলের প্রায় ৬০ ভাগেরও বেশি বিলুপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক।
১. পদ্মা সেতুর ফলে এদেশে প্রতিবছর ১.৯% হারে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে,
২. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ১.২২%,
৩. পদ্মা সেতু ও উভয় পাড়ের পর্যটন থেকেই প্রতিবছর কয়েক শ কোটি টাকা আয় হবে ,
৪. দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি উপকূলীয় জেলার সাথে ৫. রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ শক্তিশালী হবে,
৬. নির্মিত হওয়ার ৩০/৩১ বছরের মধ্যে জিডিপি ৬০০০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে,
৭. সেতুর উভয় পাশেই ব্যাপক হারে শিল্পায়ন ও নগরায়ন ঘটবে যা অর্থনীতির চাকা সচল রাখবে,
৮. প্রায় ২.৫ কোটির অধিক বেকারের কর্মসংস্থান ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে।এছাড়াও আরও অগণিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে।
বাংলাদেশে পদ্মার ভৌগোলিক অবস্থানটা বেশ জটিল। নদীর ব্যবহার কমে গেলে প্রাকৃতিক ভাবেই নদী তার গতিপথ পরিবর্তনে ব্যকুল হয়ে পড়ে। পদ্মাসেতু নির্মাণ পরবর্তী সময়ে এটাই সবচেয়ে বড় ভয়। বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, পদ্মা বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদীর একটি যেটি বছরে প্রায় ১.২ বিলিয়ন টনের বেশি পলি মাটি বয়ে আনে। পদ্মা শাসন ব্যতিত পলি এসে নদী ভরাট হওয়া অব্যাহত থাকলে ভৌগোলিক কারণে এর প্রভাব পড়বে দেশের প্রতিটি নদ-নদীর উপর। এতদিন পর্যন্ত আমরা মোটামুটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথাই জেনেছি। এবার একটু বিশ্লেষণ করা যাক এর বাইরেও পদ্মাসেতু পরবর্তী অদৃশ্য যে ঝুঁকি আমাদের সামনে হানা দিতে পারে-
১. দেশের ৪০ শতাংশের বেশি জেলের জীবিকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে,
২. মৎস্যখাতের উপর প্ভাব পড়ার ফলে সমগ্য দেশে আমিষের ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে,
৩. দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিব্যবস্থায় পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে,
৪. বর্ষায় অতিবন্যা এবং গ্রীষ্মে পানিশূন্যতা হতে পারে,
৫. স্বল্প ব্যয়ে মালামাল স্থানান্তরিত করা ক্রমান্বয়ে কঠিন হয়ে পড়বে,
৬. সর্বোপরি মেঘনা এবং যমুনা সরাসরি পদ্মা নদীর সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এদেরও গতিপথের পরিবর্তন আসতে পারে এমনকি নতুন উপনদীও সৃষ্টি হতেই পারে যা ইতিহাস থেকে আমরা ইঙ্গিত পাই।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন পদ্মা নদী শাসনের লক্ষে অনেকগুলো পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে। এর পাশাপাশি আরও যা করতে হবে বলে আমি মনে করি-
১. নদীবিশেষজ্ঞান সম্পর্কিত বিদ্যা Potology'র উপর বিশেষ ভাবে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।
২. নিয়মিত পরিকল্পিত খনন করতে হবে যাতে পলি জমতে না পারে। মনে রাখতে হবে খনন ই প্রধান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা পলি জমে নদী ভরাটরোধের জন্য,
৩. যমুনা এবং মেঘনা নদীর সাথে পদ্মার মিলনস্থলে অবাধে জল চলাচল সুনিশ্চিত করতে হবে,
৪. পদ্মাসেতুর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের নদীর পাড় ভাঙন রোধে পাড় বাধা সহ যাবতীয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে,
৫. পদ্মার উপনদী এবং শাখানদীগুলোর অবাধে জল চলাচল সুনিশ্চিত করতে হবে।
পদ্মাসেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশের জন্য এটি আশীর্বাদস্বরূপ। নিঃসন্দেহে এটি সমগ্র দেশের বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিবে। পদ্মাসেতুর অর্থনৈতিক দিকের পাশাপাশি পদ্মার তথা সমগ্র দেশের নদীর ভবিষ্যৎ নিয়েও আমাদের ভাবা উচিত। তাই আমাদের নদীবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিদ্যা Potomology'র উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তা নাহলে, পদ্মার পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের স্থানীয় ভাষায় বলতে হয় "সেতু হলে, নদী মরে যাবে যে!"
লেখকঃ
![]() |
| শাকিল খান https://www.facebook.com/mdshakilkhan10945 |


Great to see you guys are doing all the good works from the very beginning of your student life in economics! Its a pleasure to see such creative activities! I am so proud to be your teacher!
ReplyDeleteA very thoughtful writing, thanks.
ReplyDelete